আবদুর রহমান খান

পাকিস্তানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তার সরকারের পতনের ব্যাপারে এতদিন আমেরিকাকে দায়ী করে আসছিলেন। কিন্ত হঠাৎ করেই দেশের জনগনকে বিস্মিত করে সুর পালটে তিনি এখন বলতে শুরু করেছেন , গত এপ্রিলে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে তার সরকারের পতনের পেছনে বিদেশি কনো চক্রান্ত ছিলনা।

পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের (পিটি আই) আয়োজনে চলমান লংমার্চে রোববার একাধিক স্থানে সমাবেশে ইমরান খান লাহোরস্থ নিজ বাসবভন থেকে ভিডিও ভাষনে এমন উলটো সুরে কথা বলেছেন।

দেশটির প্রভাবশালী ইংরেজী দৈনিক ডন জানিয়েছে, পাকিস্তানের রাজনৈতিক অঙ্গনে এইমূহুর্তে তেমন কোনো পরিবর্তন দৃশ্যমান না হলেও ভেতরে ভেতরে বরফ গলতে শুরু করেছে। ভালো করে খেয়াল করলে টের পাওয়া যাবে পরিবর্তনের গুঞ্জন শুরু হয়েছে।

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি’র নেপথ্য দূতিয়ালীতে দেশটির সরকার ,বিরোধী পীটিআই দল এবং প্রশাসনের মধ্যে সমঝোতার একটা ইতিবাচক আভাষ পাওয়া যাছে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তার ক্ষমতা হারানোর পর থেকে একের পর এক সমাবেশ এবং সর্বশেষ রাজধানী অভিমুখী লং মার্চ পরিচালনা করে বিক্ষুব্ধ দেশবাসীকে এক প্রকার নৈরাজ্যের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন। এখন দেখা যাচ্ছে নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগের ব্যাপারে ইমরান তার সুর নরম করছেন। আবার আমেরিকার বিরুদ্ধে তার পুর্বের বিরূপ মনোভাবও ত্যাক করেছেন।

শুধু তাই নয়, চলমান লং-মার্চকে ক্ষমাতাসীন সরকারের বিপক্ষে জনরোষকে শান্তিপূর্ন পথে পরিচালনার জন্য বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ আশা করেছেন ইমরান খান। পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনাবিনীর ভুমিকার ব্যাপারে ইমরান খান বলেছেন, দেশটির ভবিষ্যত নিয়ে তারা “গঠনমুলক ভুমিকা” পালন করতে পারে।

তিই মনে করেন, সরকার, প্রশাশন এবং সেনাবাহিনী – এ তিন শক্তির মধ্যে ভারসাম্য থাকতে হবে। দেশে জনগনের নির্বাচিত সরকার থাকবে আর কর্তৃত্ব থাকবে অন্য জায়গায়, নির্দেশ আসবে আর এক স্থান থেকে তা হতে পারে না ।

ওদিকে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগের ব্যাপারে সমঝোতার পথে এগুতে চান বলে ধারনা করা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত সেনাবাহিনী দেশটির অস্থির রাজনোতিক অংগনে হস্তক্ষেপ করে নতুন কোনো বিতর্ক সৃষ্টি করতে আগ্রহী নয়।

তাছাড়া, ক্ষমতাসীন মুসলীম লীগ (নেওয়াজ) ইমরান খানের লং-মার্চকে বাধাগ্রস্থ করতে নানা অপকীর্তি করলেও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি খারাপ করার মতো কোনো উস্কানীতে পা দেয় নি।

এ অবস্থায় দেশবাসী আশা করছেন, পাকিস্তানের রাজনীতি নেওয়াজ শরীফ এবং ইমরান খানের দলের দড়ি-টানাটানির ওপর ছেড়ে না দিয়ে প্রেসিডেন্ট আলভী সক্রিয়ভাবে চেষ্টা করবেন দ্রুত নির্বাচন দিয়ে সংকট সমাধানর জন্য।

এর আগে ইমরান খান অভিযোগ করেছেন, পাকিস্তান মুসলিমলীগের শীর্ষ নেতা নেওয়াজ শরিফ একটি স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাধা দিয়ে দেশকে বিপর্যয়ের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন । কারন, তার ভয় নির্বাচন দিলে তারা হেরে যাবে। পাকিস্তানের জনগনের জন্য এটা দুর্ভাগ্যের বিষয় যে, সুপ্রীম কোর্টে সাজা প্রাপ্ত এই ব্যাক্তি পাকস্তানের নির্বাচন এবং নতুন সেনা প্রধান নিয়োগের ব্যাপ্যারে কল-কাঠি নাড়তে চায়।

এর আগে ব্রিটিশ পত্রিকা ফিনান্সিয়াল টাইমস –এর সাথে এক সাক্ষাতকারে ইমরান খান বলেছেন, তাকে ক্ষমতাচ্যুতির ব্যাপারে তিনি এখন আর আমেরিকাকে দায়ি করেন না। বিষয়টি শেষ হয়ে গেছে। এখন তিনি ইসলামাবাদের সঙ্গে ওয়াশিংটনের মধ্য “ সন্মানজনক” সম্পর্ক চান।

ইমরান দুঃখ করে বলেন আমেরিকার সাথে পাকিস্তানের সম্মপর্ক ছিল প্রভু-ভৃত্যের মত। আমাদেরকে ব্যাবহার করা হয়েছে ভারাটে বন্দুক হিশেবে। আর এজন্য আমি আমেরিকার চেয়ে পাকিস্তানের সরকারকে বেশী দায়ি মনে করি।

এ সময় ইমরান খান আরো বলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর আগে তার মস্কো সফর ছিল বিব্রতকর বিষয়। তবে সে সফরটি পরিকল্পনা করা হয়েছিল কয়েক মাস আগেই । ##