হ্যাপী করিম ,মহেশখালী প্রতিনিধি:
আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মহেশখালীতে বাড়ছে ডায়রিয়া ও ঠাণ্ডাজনিত নানা রোগের প্রাদুর্ভাব। বিশেষ করে শীতকালীন রোটা ভাইরাসের কারণে ডায়রিয়ায়, জ্বর, সর্দি, কাশি আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি। গত কয়েক দিন ধরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে উপচেপড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে ভর্তি হয়েছে ৩ গুণ বেশি রোগী। শয্যা সীমিত হওয়ায় অনেককে বারান্দায় থেকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। আবার জায়গা না পেয়ে বাড়ি চলে গেছে অনেকেই। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হওয়ায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, রোগী বেশি থাকলেও সংকট নেই স্যালাইন ও ওষুধের। প্রতিদিন প্রায় ৫/৬শ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন বহির্বিভাগে। এর সঙ্গে রয়েছে ভর্তি থাকা রোগী ও স্বজনদের চাপ। আবহাওয়ার পরিস্থিতি বিবেচনায় নাগরিকদের আরও বেশি সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন মহেশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ মাহফুজুল হক।

১৮ ই নভেম্বর সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে সরেজমিনে দেখা যায়, ঠান্ডাজনিত কারণে বেড়েছে বয়স্ক ও শিশু রোগীর সংখ্যা। গেল কয়েক দিন ধরে হাসপাতালে ধারণক্ষমতার দিগুণের বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে। শয্যা সংকট দেখা দেওয়ায় হাসপাতালের মেঝে ও বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেক রোগী। গেল এক সপ্তাহে মঙ্গলবারে ৬১ জন শিশু ভর্তি হয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে। এদিন দুপুর পর্যন্ত ৫০ শয্যার বিপরীতে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে ৭৭ জন শিশুসহ মোট ১৯৪ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। এই সংখ্যা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে দাবি চিকিৎস’দের।

আলতাজ নামের এক রোগীর মা বলেন, প্রায় এক সপ্তাহ ধরে আমার মেয়ের জ্বর। ওষুধ খাওয়াইছি। কিন্তু কোনো উপকার হয়নি। যার কারণে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। ৪ বয়সী শিশু বাবু’কে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া মা হোসনে আরা বলেন, কয়েকদিন ধরে বাচ্চার জ্বর, সর্দি ও কাশি। এখানে ভর্তি হলে ডাক্তাররা এক্সরে করতে বলেছেন। এক্সরেতে দেখা গেছে, ছেলের বুকে কাশি জমে শুকিয়ে গেছে। সুস্থ হতে সময় লাগবে। পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি রোগী মোহাম্মদ বলেন, হঠাৎ করে ঠাণ্ডায় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। তাই সোমবার (১৪ নভেম্বর) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। এখন কিছুটা ভালো। মহেশখালী প্রতিনিধি বদরুন্নেছা সুখি (হ্যাপী করিম) কে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে দায়িত্বরত সেবিকা ফরিদা ইয়াছমিন বলেন,
নিউমোনিয়াসহ ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই শিশু রোগীরা ভর্তি হচ্ছে। অনেক বেশি রোগী হওয়ায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, শুধু পুরুষ, মহিলা ও শিশু ওয়ার্ডে একই অবস্থা। ঠাণ্ডাজনিত রোগের সঙ্গে ডেঙ্গু যেন ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে মহেশখালীবাসীর জন্য।
বর্তমান হাসপাতালে ৬ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছে। এছাড়া মোট ২০০ জন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। ডেঙ্গু আক্রান্তদের অনেক সতর্কভাবে সেবা দিচ্ছে বলে জানান..আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আবুল কাশেম।

মহেশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ মাহফুজুল হক বলেন, আমাদের ৫০ শয্যার অনুমোদন ও তাঁর তুলনায় জনবল রয়েছে। এই অবস্থায় রোগীর চাপ থাকলেও আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। তিনি আরও বলেন, ঠাণ্ডাজনিত রোগীর প্রকোপ দিন দিন বাড়ছে। ইনডোর ও আউটডোর দুই জায়গাতেই জ্বর, সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়াসহ নানা ধরনের রোগী আসছে। প্রতিদিন বহির্বিভাগে ৪/৫’শ রোগীকে সেবা দেওয়া হচ্ছে। আসলে স্বল্প সংখ্যক চিকিৎসক দিয়ে এই সেবা দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। হাসপাতালে বিদ্যমান জনবল বাড়লে রোগীদের আরও বেশি সেবা দিতে পারবেন বলে জানান ওই কর্মকর্তা।