মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

কক্সবাজার বিচার বিভাগে রেকর্ড সংখ্যক মামলা নিষ্পত্তি করায় কক্সবাজারের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম ফরিদকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। রোববার ১১ ডিসেম্বর সকালে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের শহীদ এটিএম জাফর আলম সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জেলা আইনশৃংখলা কমিটির সভায় তাঁকে এ বিরল সম্মাননা দেওয়া হয়।

আইনশৃংখলা কমিটির সভায় সভাপতি জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশীদ, নবাগত জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান, কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মোঃ মাহফুজুল ইসলাম পিপিএম (বার) আনুষ্ঠানিকভাবে সফল আইন কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম ফরিদের হাতে তাঁর কর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ক্রেস্ট ও মূল্যবান বই তুলে দেন।

এ সময় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, কক্সবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আবছার, সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান, জেলার বিভিন্ন দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকতা ও কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বিশ্বস্থ সুত্র জানিয়েছে, কক্সবাজােরের আদালত সমুহে বর্তমানে ৮২ হাজার ৭৯৮টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এরমধ্যে, দেওয়ানি ২৬ হাজার ৬২টি এবং ফৌজদারি মামলার সংখ্যা ৫৬ হাজার ৭৩৬টি। এতে শুধু মাদকের মামলা রয়েছে ২৫ হাজারের ওপরে। শতাংশের বিচারে এটি প্রায় ৩০ শতাংশ। মামলা নিষ্পত্তির হিসেবে গেল সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রাম বিভাগে প্রথম এবং নভেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে এগিয়ে রয়েছে কক্সবাজার আদালত।

সম্মাননা প্রপ্তিতে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম ফরিদ বলেন, মামলা নিষ্পত্তি ও আদালতে গরিব-অসহায় মানুষকে যে পরিমাণ সেবা দিয়েছি, তা বিগত ৪০ বছরের রেকর্ড। ৩২ বছর আগের মহেশখালীর চাঞ্চল্যকর খাইরুল আমিন হত্যা মামলাও নিষ্পত্তি করা হয়েছে।

মামলা কীভাবে দ্রুত নিষ্পত্তি করা যায়, সে জন্য দিনরাত পরিশ্রম করেছি। সবার সঙ্গে সমন্বয় রেখেছি। তার স্বীকৃতি প্রদান ও কর্মের মূল্যায়ন করেছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। এতে আরো অনুপ্রাণিত হয়েছি এবং কাজের গতি আরো বেড়ে যাবে।

তিনি বলেন, ২০১৯ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর জেলার সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা হিসাবে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এর দায়িত্ব গ্রহণ করি। এর পর আদালতে মামলার জট কমাতে কার্যকর ও ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিই।অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ মামলাসমূহ চিহ্নিত করে সামনে নিয়ে আসা হয়। গত তিন বছর তিন মাসে সততা, দায়িত্ববোধ, নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সাথে কাজ করেছি।

পিপি ফরিদুল আলম ফরিদ বলেন, এজন্য শুধু গত এক মাসে ১ হাজার ৩৬৬টি মামলা নিষ্পত্তি করতে সক্ষম হয়েছি। দেশব্যাপী আলোচিত মেজর (অব:) সিনহা হত্যা মামলা, আত্মাস্বীকৃত ১০১ জন ইয়াবা কারবারির মামলার রায় আমার দায়িত্বকালেই সম্পন্ন হয়েছে। আরো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় অপেক্ষমাণ রয়েছে।

তিনি বলেন, চলতি বছরের ১৯ আগস্ট দেশের প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী কক্সবাজার সফরকালে সর্বোচ্চ সংখ্যক মামলা নিষ্পত্তির বিষয় অবহিত হয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। যেটা পুরো কক্সবাজারবাসীর জন্য একটা বিশাল প্রাপ্তি।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি ফরিদুল আলম ফরিদ বলেন, বিচারপ্রার্থীর সেবা নিশ্চিত করতে ও মামলার নিষ্পত্তির পরিমাণ বাড়াতে হলে পর্যাপ্ত বিচারক ও আইনজীবীদের আন্তরিকতা দরকার। দ্রুত মামালার নিষ্পত্তিতে বাদী ও সাক্ষীর ভূমিকাও কম নয়। সাক্ষীদের আদালতে উপস্থিত করা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে মামলা নিষ্পত্তির সংখ্যা আরো অনেক বৃদ্ধি পাবে।

অদম্য ইচ্ছাশক্তি সম্পন্ন পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম ফরিদ বলেন, মামলা নিষ্পত্তিতে কক্সবাজার বিচার বিভাগ সারাদেশের জন্য একটি ‘রোল মডেল’।

তিনি বলেন, সঠিক সময়ে সাক্ষী হাজির না থাকলে মামলায় দীর্ঘসূত্রিতা সৃষ্টি হয়। তাই যথাসময়ে আদালতে সাক্ষীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে সাক্ষীর মোবাইল নাম্বার সংরক্ষণ করা আবশ্যক।

তিনি বলেন, মামলা নিষ্পত্তির বিষয়টি একটা টিম ওয়ার্ক। এককভাবে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের দ্বারা মামলার নিষ্পত্তির হার বাড়ানো সম্ভব নয়।

কক্সবাজার বিচার বিভাগের রেকর্ড সংখ্যক মামলা নিষ্পত্তিতে তাঁকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করায় সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। ভবিষ্যতে আরো অধিক সংখ্যক মামলা নিষ্পত্তি করে কক্সবাজার বিচার বিভাগে মামলার জট কমাতে তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেছেন।

অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম ফরিদ ১৯৯৭ সালের ৩ মার্চ কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতিতে যোগদান করেন এবং জেলার সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অর্থাৎ পিপি হিসাবে তিন বছর তিন মাস ধরে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টেরও তালিকাভুক্ত একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী।