বার্তা পরিবেশক:
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সুরক্ষা ও মানবিক সহায়তায় ইতালী সরকারের ৩ মিলিয়ন ইউরোর উদার অনুদানকে স্বাগত জানিয়েছেন। আজ বাংলাদেশে নিযুক্ত ইতালীর রাষ্ট্রদূত এনরিকো নুনজিয়াতা এবং ইউএনএইচসিআর-এর রিপ্রেজেন্টেটিভ ইয়োহানেস ভন ডার ক্লাও-এর উপস্থিতিতে এই ঘোষণা দেয়া হয়।
ইউএনএইচসিআর-এর ইয়োহানেস ভন ডার ক্লাও বলেন, “ইতালীর সরকার ও তাদের জনগণের এই সহায়তার মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশে আশ্রিত প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য জীবন রক্ষাকারী সুরক্ষা ও বিভিন্ন সাহায্য দিতে পারবো। মানবিক সাহায্যের উপর নির্ভরশীল এই শরণার্থীদের জন্য এর মাধ্যমে আমরা দিতে পারবো স্বাস্থ্যসেবা, পানি ও পয়ঃনিস্কাশন, এবং অতি জরুরী সুরক্ষা সহায়তা। পাশাপাশি শরণার্থীদের, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের, শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নের কাজ করা যাবে এই অনুদানের মাধ্যমে। ইতালীর ফরেন পলিসি বাজেট থেকে আসা এই উদার অনুদান দেশটির দীর্ঘমেয়াদী অঙ্গীকারের প্রতিফলন। এই মুহুর্তে যখন আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে পাওয়া আর্থিক সাহায্য অনেকাংশে কমে যাওয়ার আভাস পাচ্ছি, তখন ইতালীর এই অনুদানকে আমরা স্বাগত জানাই”।
ইতালীর রাষ্ট্রদূত এনরিকো নুনজিয়াতা বলেন, “ইতালীর পররাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা মন্ত্রণালয়ের এই অনুদান দেয়া হচ্ছে জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানে নির্ধারিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও ইউএনএইচসিআর-এর বিভিন্ন কার্যক্রমের জন্য। কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোতে ও ভাসান চরে শরণার্থীদের জন্য অতি প্রয়োজনীয় ও জীবন যাপনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিসেবাগুলো নিশ্চিত করার জন্য ইতালী সরকারের অঙ্গীকারের অংশও এই অনুদান। ২০১৭ সালের আগস্ট মাস থেকে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিজ ভূখন্ডে আশ্রয় দেয়ার জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কাজ ও উদারতার প্রশংসায় ইতালী বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন ও জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর মাধ্যমে নিয়মিত অনুদান দিয়ে যাচ্ছে”।
ইতালীর কাছ থেকে পাওয়া এই আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে ইউএনএইচসিআর রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য দিতে পারবে নিবন্ধন (রেজিস্ট্রেশন), আইনী সহায়তা, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার শিকার মানুষদের সাহায্য, কমিউনিটি বেজড প্রোটেকশন এবং শিশুবান্ধব স্থান রক্ষণাবেক্ষণের মত বিভিন্ন সুরক্ষা সেবা। শিক্ষকদের মিয়ানমারের পাঠ্যক্রমের উপর প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষায় এবং নারীদের দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সর্বোপরি শরণার্থীদের ক্ষমতায়ন করা যাবে, এবং মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার আগে পর্যন্ত এর মাধ্যমে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যয় বজায় রাখা যাবে।
এই অনুদানের মাধ্যমে আরও নিশ্চিত করা যাবে শেল্টার, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, পানি ও পয়ঃনিস্কাশনের মত কিছু নিত্য প্রয়োজনীয় সেবা। এর পাশাপাশি লিকুইফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি)-র সাহায্যে রান্নার জ্বালানীর একটি নিরাপদ ও পরিচ্ছন্ন ব্যবস্থা তৈরি করে ক্যাম্প ও তার চারপাশের পরিবেশের অবক্ষয় প্রতিরোধ করা যাবে।
মিয়ানমারে সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসার পাঁচ বছর পর বর্তমানে প্রায় ৯২০,০০০ রোহিঙ্গা শরণার্থী কক্সবাজারের ঘনবসতিপূর্ণ ক্যাম্পগুলোতে বাস করছে, আর ভাসান চরে আশ্রিত আছে প্রায় ৩০,০০০ জন।