জালাল আহমদ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:
বর্ণাঢ্য আয়োজনে বাংলা একাডেমি আজ ২৯শে অগ্রহায়ণ ১৪২৯/১৪ই ডিসেম্বর ২০২২ বুধবার শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করেছে। সকাল ৭:৩০টায় রায়েরবাজার শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, মিরপুরস্থ শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়স্থ শহিদ বুদ্ধিজীবী সমাধিস্থলে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। বেলা ৩:৩০টায় একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য প্রদান করেন বাংলা একাডেমির সচিব এ. এইচ. এম. লোকমান। জাতিসত্তার বিনাশ ও বুদ্ধিজীবী উৎসাদন শীর্ষক বক্তৃতা প্রদান করেন প্রাবন্ধিক-গবেষক মফিদুল হক। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন শহিদ বুদ্ধিজীবী আনোয়ার পাশার পুত্র প্রকৌশলী রবিউল আফতাব। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।
এ. এইচ. এম. লোকমান বলেন, নতুন প্রজন্মের প্রতি আমাদের আহবান, শহিদ বুদ্ধিজীবীদের রচিত সাহিত্যকর্ম এবং তাঁদের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে জেনে তারা যেন তাদের আদর্শে নিজেদের জীবন গড়ে তোলে। তাহলেই কেবল শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন সার্থক হবে।
মফিদুল হক বলেন, শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালনকালে আমরা বড় পরিসরে দেখতে চাইবো বুদ্ধিজীবী উৎসাদনের ঘটনাধারা। এর থেকে আমাদেরকে নিতে হবে ইতিহাসের শিক্ষা। দীর্ঘ বিলম্বে হলেও বুদ্ধিজীবী নিধনের কতক ঘটনার বিচার আমরা সম্পন্ন করতে পেরেছি। এতে কেবল ঘাতকদের বিরুদ্ধে রায় ঘোষিত হয়নি, বরং ইতিহাসের রায়ও আমরা অর্জন করেছি। তিনি আরও বলেন, বুদ্ধিজীবী নিধনের ঘটনাকে আমাদের দেখতে হবে বড় পটভূমিকায়। ২৫শে মার্চ পাকবাহিনী সামরিক অভিযান কেবল সূচনা করেনি, বাঙালি জাতিসত্তা ধ্বংস করতেই পরিচালিত হয়েছিল এই অভিযান।
প্রকৌশলী রবিউল আফতাব বলেন, শহিদ বুদ্ধিজীবীদের নির্মম হত্যার দৃশ্য যারা দেখেনি তাদের পক্ষে ধারণা বা কল্পনা করাও সম্ভব নয় যে, কত ভয়াবহ ছিল সেই দিনের নৃশংসতা। এত মৃত্যু, এত রক্ত, এত নির্মমতা পৃথিবীর ইতিহাসে আর চোখে পড়ে না। শহিদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আজকে আমরা যে বাংলাদেশে পেয়েছি সেখানে যদি আমরা শান্তিতে বসবাস করতে পারি, যদি ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রতিক পরিবেশে গণতান্ত্রিকভাবে বেঁচে থাকতে পারি তাহলেই কেবল তাদের আত্মত্যাগ সার্থক হবে।
কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের আগে যেসব বুদ্ধিজীবীকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল, প্রকৃতপক্ষে তাঁরা মারা যাননি; তাঁরা আমাদের মধ্যেই সক্রিয় আছেন। আমরা তাঁদের বুদ্ধিবৃত্তিক সন্তান। গ্রেনেড বোমা দিয়ে বাঙালিকে ধ্বংস করা যায় না। সেটা করতে গেলে কেবল বাঙালি নয় পৃথিবীর সকল মানুষকেই হত্যা করতে হয়। জ্ঞানভিত্তিক যুদ্ধের পথ খোলা রাখলে আমাদের পক্ষে মানুষের সমতা সম্পর্কে একটা মীমাংসায় পৌঁছানো সম্ভব, একটা সংহতি ও অভিন্নতার ধারণা অর্জন করা সম্ভব। পালানোর আগে মুক্তবুদ্ধি ও জ্ঞানের উপাসকদের হত্যা করে, তাঁদের দেহকে বিনাশ করে একটা জাতিকে পরাজিত করা সম্ভব নয়।
বিজয় দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি:
মহান বিজয় দিবস ২০২২-এর কর্মসূচি
বাংলা একাডেমি আগামীকাল ৩০শে অগ্রহায়ণ ১৪২৯/১৫ ডিসেম্বর ২০২২ বৃহস্পতিবার মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে সকাল ১১:০০টায় একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ প্রদান করবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। বক্তৃতা প্রদান করবেন কবি ও গবেষক ড. মোহাম্মদ সাদিক। সভাপতিত্ব করবেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করবেন বাংলা একাডেমির সচিব এ. এইচ. এম. লোকমান।
১লা পৌষ ১৪২৯/১৬ই ডিসেম্বর ২০২২ শুক্রবার সকাল ৮:০০টায় একাডেমির পক্ষ থেকে সাভারস্থ জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহিদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে।