আব্দুস সালাম,টেকনাফ (কক্সবাজার):
দীর্ঘ ২৭বছর ধরে একই অফিসে কর্মরত আছেন টেকনাফ উপজেলা উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুর রহিম আজাদ। তাঁর খুঁটির জোর এতই শক্ত যে বারবার বদলি হলেও তদবির করে পুনরায় একই অফিসে বহাল রয়েছেন। একচেটিয়া প্রভাব খাটিয়ে তাঁর নানান অনিয়ম, দুর্নীতি, চিকিৎসা সেবার বিনিময়ে গ্রাহক থেকে অর্থ আদায়, অফিসের কর্মচারীদের সাথে দুর্ব্যবহার, সেবা প্রার্থীদের হয়রানি এসব নতুন কিছু নয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র ও অনুসন্ধানে জানা যায়,চলতি বছরের ২০২২ সালের আগস্ট মাসের ২১ তারিখ বিভাগীয় প্রাণী সম্পদ দপ্তরের চট্রগ্রাম বিভাগের পরিচালক ডা. এ.কে.এম হুমায়ুন কবির স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরাধীন কর্মরত
৮জন কর্মকর্তা/কর্মচারী- তার নামের পাশ্বে উল্লেখিত পদে ও স্থানে জনস্বার্থে টেকনাফ প্রাণিসম্পদ দপ্তরে কর্মরত উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুর রহিম আজাদকে বদলী করা হলো।
বিভাগীয় প্রাণীসম্পদ দপ্তর, চট্রগ্রাম বিভাগ, চট্রগ্রাম এর ১৬/০৮/২০২২ তারিখের ৩৩.০১.০০০০.২০২.২৮.০২৯.২১.৬১৪ সংখ্যক স্মারকের ক্রমিক নং-০৫ এ আব্দুর রহিম আজাদ,উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (সম্প্রসারণ), উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল,টেকনাফ,কক্সবাজার আদেশ এর অংশটুকু বাতিল করা হলো। কর্মকর্তা/কর্মচারী আগামী ৩০/০৮/২০২২ তারিখের মধ্যে বদলীকৃত কর্মস্থলের মধ্যে যোগদান করবেন। অন্যথায় ৩১/০৮/২০২২খ্রিঃ তারিখ বর্তমান কর্মস্থল হতে তাৎক্ষনিক অবমুক্ত বলে গণ্য হবেন।
এর আগে গত বছর ২০২১ সালের মার্চ মাসেও বদলী হলে পুনরায় একই কর্মস্থলে বহাল তবিয়তে রয়েছেন তিনি।
সরকারী আদেশকে অমান্য করে সে টেকনাফ উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে তা সচেতন মহলকে ভাবিয়ে তুলেছে।

এছাড়া টেকনাফ উপজেলা প্রাণীসম্পদ দপ্তররের আওতাধীন ৬টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে খামার খামারিরা সেবা গ্রহণ করে থাকে।

সরেজমিনে বিভিন্ন ইউনিয়নের ভুক্তভোগীদের সাথে আলাপকালে তারা জানান,টেকনাফ উপজেলা উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুর রহিম আজাদ কোন কৃষকের গৃহপালিত পশু খামারে দেখতে গেলে তিনি এক হাজার থেকে দুই হাজার টাকা ভিজিটের টাকা আদায় করে থাকেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষক ও খামারে চাকরি করা অনেকেই জানান, এই উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করলে অনিয়ম, দুর্নীতি, চিকিৎসা সেবার বিনিময়ে গ্রাহক থেকে অর্থ আদায়, অফিসের কর্মচারীদের সাথে দুর্ব্যবহার, সেবা প্রার্থীদের হয়রানির প্রমাণ বেরিয়ে আসবে।

টেকনাফ সদরের ভুক্তভোগী সব্বির আহমদ অভিযোগ করেন, গবাদিপশুর পাতলা পায়খানা হওয়ায় আমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা আব্দুর রহিম আজাদকে ফোন করলে ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোন কেটে দেয়।পরের দিন গরুর সমস্যা নিয়ে পশু হাসপাতালে গেলে গরুর ইঞ্জেকশন ও ভিজিট বাবদ টাকা নেন,এবং উনার নিজস্ব প্যাডের প্রেসক্রিপশনে ঔষধ লিখে দেয়,তিনি একটা দোকান দেখিয়ে দেন, ঔষধ গুলো সেখান থেকে কিনতে বলেন।উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সংলগ্ন টেকনাফ পৌরসভার লেঙ্গুরবিল সড়কের ইসলামাবাদ এলাকার মেসার্স হোসাইন মেডিকো নামে একটা দোকান আছে,বাধ্য হয়ে ওই দোকান থেকে কিনে নিতে হয়।এই দোকান থেকে প্রেসক্রিপশন প্রতি ১০% করে কমিশন নেন তিনি।

স্থানীয় একাধিক খামারিরা জানান- উপজেলা প্রাণীসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের ডিপ্লোমা সনদধারী উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুর রহিম আজাদ পেশায় পশু-প্রাণীদের ডাক্তার হলেও,জনগনের সেবায় তিনি নিয়োজিত নন। নিজে কখনো এলাকায় গিয়ে গবাদী পশুকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন না। অসুস্থ গরু,ছাগল,মুরগীসহ বিভিন্ন গবাধি পশু, ছাগল গাড়িতে করে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে হয় উক্ত অফিসে।অনেক সময় গবাদিপশুর চিকিৎসার প্রয়োজনে হাসপাতালে আসলে বিভিন্ন হয়রানির শিকারও হতে হয়। সাধারণ মানুষের ডাকে উনি আসেন না,কিন্তু প্রাণী সম্পদ দপ্তর বা পশু হাসপাতালে সেবা নিতে গেলে ১০০০/২০০০ টাকা ভিজিট দিতে হয়।খামারিদের গরু বা ছাগলের সমস্যা দেখা দিলে,প্রাণী সম্পদ দপ্তরে ফোন করে ডেকে সেবা নিতে চাইলে সেবা থেকে বঞ্চিত হন খামারিরা,যদি টাকার ডিমান্ডটা বেশি হলে সেবা পাওয়া যায়।
ভিজিট বানিজ্য অনিয়ম দুর্নীতির কারণে খামারী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে বাড়ছে ক্ষোভ।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়,উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের আওতাধীন হ্নীলার এলএসপির দায়িত্বে থাকা আব্দুর রহমানকে দিয়ে সরকারিভাবে ভ্যাকসিন টিকা পি পি আর ৫০ টাকা দাম থাকলেও তা খামারীদের কাছ থেকে টিকার দাম নেওয়া হয় ১০০০/২০০০ টাকা আর মুরগীর রানীক্ষেত (আরডিবি) ভ্যাকসিন টিকা ১৫ টাকা দাম হলেও বিভিন্ন জনের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয় ৩০০/৫০০ টাকা পর্যন্ত। ঔষধ ফ্রীতে দেওয়ার কথা থাকলেও কিনতে হয় তাদের নিজস্ব ফার্মেসী থেকে।সেখানে সকল যাবতীয় ঔষদ বিক্রয় ও লেনদেন চলে কমিশনের উপর।

এ বিষয়ে এলএসপির দায়িত্বে থাকা আব্দুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,আমি সরকারি ঔষধ ভ্যাকসিন ও টিকা বিক্রি করিনা,কিন্তু হ্নীলা মৌলভীবাজারের মো. আব্দুল্লাহ,উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে ভ্যাকসিন না পেয়ে এলএসপি আব্দুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে ভ্যাকসিন টিকার দাম চায় ১০০০ থেকে/২০০০ টাকা।

অভিযোগ উঠেছে ,অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে গবাদী পশুকে ভ্যাকসিন, টিকা ও ইনজেকশন প্রদান করেন উপজেলা উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুর রহিম আজাদ।
সরকারী সকল সুযোগ সুবিধা তিনি ভোগ করেছেন। কিন্তু জনগন সরকারী ঔষধ, চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত।জবাবদিহিতা না থাকায় উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা অনিয়ম ও দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছেন।এতো এতো অনিয়ম দুর্নীতি করে কিভাবে এক কর্মস্থলে ২৭ বছর ধরে চাকুরী করছেন এমনটাই সাধারণ মানুষের প্রশ্ন।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ডিএলও) ডা. সাহাব উদ্দিন জানান, উপজেলা উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুর রহিম আজাদের বদলী আদেশের বিষয়ে জানতে চাইলে আদেশটি আপতত স্থগিত রয়েছে। একজন কর্মকর্তা টেকনাফে সুনামের সহিত ২৭ বছর ধরে কৃষক ও খামারীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। ভ্যাকসিন টিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাণীসম্পদ দপ্তরে গিয়ে খোঁজখবর নিতে বলেন।

টেকনাফ উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ’র কাছে একাধিকবার মোবাইলে ফোনে করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।