মোঃ আরাফাত সানি,টেকনাফ:

কক্সবাজারের টেকনাফে অস্বাস্থ্যকর মানহীন, নোংরা পরিবেশে অবৈধ ভাবে বেকারি গুলোতে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য পণ্য তৈরিতে সয়লাব হয়েছে।

এসব বেকারিগুলোতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নিম্নমানের উপাদান ও ক্ষতিকর কেমিক্যাল মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে মানহীন বাহারি খাদ্য পণ্য। যা বিএসটিআইয়ের অনুমোদন ছাড়াই বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোড়কে পুরে বিক্রি হচ্ছে কেক-রুটি-বিস্কুট, চানাচুর, মিষ্টিসহ মুখরোচক নানা খাবার। দখল করে ফেলেছে পৌরসভাসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের সব কটা বাজার ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। সরল বিশ্বাসে এসব খেয়ে পেটের পীড়াসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছে শিশু-কিশোর ও সহজ-সরল মানুষেরা।

সরেজমিন দেখা যায়, পৌর এলাকাসহ উপজেলার ইউনিয়নগুলোতে অসংখ্য বেকারি গড়ে উঠেছে আনাচে-কানাচে। সরকারি অনুমতি ছাড়াই মানহীন পণ্য উৎপাদন করে বাজারজাত করছে এসব বেকারি। যার মধ্যে রয়েছে টেকনাফ পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড বাসটার্মিনাল নাইট্যং পাড়া এলাকায় বিসমিল্লাহ ফুডস এন্ড জে এস ফুড, সদরের লেংগুর বিল রোডের বিজিবি ক্যাম্পের পূর্ব পাশে একতা ফুডস এন্ড বেকারী, টেকনাফ পাইটল স্কুল রোডের কুমিল্লা বেকারী এন্ড ন্যাশনাল ফুডস, শাহপরীর দ্বীপের স্বাদ ফ্রুড এন্ড বেকারি, বাহার ছড়া শামলাপুরের বিছমিল্লাহ বেকারী, মায়ের দোয়া বেকারী, সুমন বেকারী, টেকনাফ সদরের তুলাতলী সোনার বাংলা কারখানা, টেকনাফ ডেইল পাড়াসহ প্রায় বেকারীগুলোসহ সব কারখানা গুলোতে বিএসটিআইর কোন নিয়মনীতি তোয়াক্কা করা হয় না। রাতদিন চলে অস্ব্যাস্থকর ও নোংরা পরিবেশে বিভিন্ন স্বাস্থ্যের ক্ষতিকারক কেমিক্যাল মিশিয়ে আইটেমের নাস্তা ও খাদ্যদ্রব্য তৈরী। এছাড়া প্রত্যেক বেকারিতে রোহিঙ্গা শিশু শ্রমিক নিয়ে কাজ করারও অভিযোগ রয়েছে। কারখানার ভেতরে যেখানে তৈরি খাবার রাখা আছে সেখানেই আটা, ময়দার গোডাউন। আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা ধরনের তৈরি পণ্য।

বেকারিগুলোতে অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে তৈরি হচ্ছে বিস্কুট, চানাচুর, কেক,পাউরুটি, মিষ্টিসহ নানা মুখরোচক খাবার। স্যাঁতসেঁতে নোংরা পরিবেশে ভেজাল ও নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে অবাধে তৈরি করা হচ্ছে বেকারির পণ্যসামগ্রী। বেকারিতে ব্যবহৃত জিনিসগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে এদিক-ওদিক। শ্রমিকরা খালি পায়ে হাঁটাহাঁটি করছেন খাবারের পাশ দিয়ে। তাদের ঘাম ঝরে পড়ছে খাবারের ওপর। আটা-ময়দা প্রক্রিয়াজাত করার কড়াইগুলোও অপরিষ্কার ও নোংরা। ডালডা দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ক্রিম। আর তার পাত্রগুলোতে ভন ভন করছে ঝাঁকে ঝাঁকে মাছি। কয়েক দিনের পুরোনো তেলেই ভাজা হচ্ছে খাবার। ময়লা হাতেই প্যাকেট করা হচ্ছে খাবারগুলো। উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ ছাড়াই বাহারি মোড়কে বাজারজাত করা হচ্ছে বনরুটি, পাউরুটি, কেক, বিস্কুটসহ বিভিন্ন ধরনের বেকারিসামগ্রী।

শুধু তাই নয়, বেকারিগুলোতে ভারী সব কাজ করানো হচ্ছে আট থেকে দশ বছরের শিশুদের দিয়ে। কয়েকটি বেকারির মালিকের কাছে বেকারির চালানোর সরকারি অনুমতি আছে কি না, জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘আপনাদের কেন কাগজ দেখাতে হবে। আমরা এভাবেই বহু বছর ধরে ব্যবসা করে আসছি।’ এখানে যিনি দায়িত্ববান স্যানিটারি ইন্সপেক্টর রয়েছে তাকে মাসিক মাসোহারা দেওয়া হয়। মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও অভিযান পরিচালনা করা হলেও কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না এ অবৈধ বেকারির পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ। এ ছাড়া পৌরসভার বাইরের বেকারিগুলোতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নজরদারি নেই বলেও জানান অনেকেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অবৈধ বেকারির এক কর্মচারীর সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, দিনের বেলায় তারা পণ্য উৎপাদন করেন না। সন্ধ্যা থেকে শুরু করে ফজরের আগেই খাবার তৈরি শেষ করেন তারা। সকালে ভ্যানগাড়ি করে দোকানগুলোতে সাপ্লাই দেওয়া হয়। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত বা অন্য কেউ ঝামেলা করেন না। তাই রাতেই কাজ করি। সকালে বেকারি বন্ধ করে রাখা হয়। কেউ এলে আমরা বলি পণ্য উৎপাদন করা হয় না।

টেকনাফ পৌর শহরের ১নং ওয়ার্ড নাইট্যং পাড়া বাসটার্মিনাল সহ কয়েকজন বেকারির মালিকের কাছে বেকারি চালানোর সরকারি অনুমোদন আছে কি না, জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘আগেও ছিলনা, এখনও নাই। বহু বছর ধরেই লাইসেন্স ছাড়া বেকারির ব্যবসা করে আসছি। বেকারির মাল তৈরি করতে গেলে একটু ময়লা থাকবেই।’ কী কী কেমিক্যাল ব্যবহার করেন জানতে চাইলে বলতে রাজি হননি তারা। পরে বলেন, ‘যে সব ব্যবহার করি সব খাবার উপযোগী।’

টেকনাফ উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর মোঃ সৌরাভ হোসেন বলেন, আমরা ফিটনেস বিহীন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্য পণ্য তৈরি করা বেকারী গুলোর বিরুদ্ধে খুব শীঘ্রই আমরা অভিযান পরিচালনা করা হবে। মাসিক মাসোহারার বিষয়ে অস্বীকার করেন।

টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ আলী এহসান জানান, বিষয়টি উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর তদারকি করে, তবে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এমন কোন ক্যমিক্যাল ও অ্যামোনিয়া খাবারের সঙ্গে মিশানো খাবার খেলে শিশু-কিশোকসহ অনেকেই অসুস্থ হয়ে নানা বিধি রোগ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুজ্জামান বলেন, বেকারিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরি হওয়ার বিষয়ে জানতে পেরেছি। শীঘ্রই অবৈধ বেকারির ঠিকানা ও তালিকা তৈরি করে অবৈধ বেকারির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।