পেকুয়া প্রতিনিধি;
কক্সবাজারের পেকুয়ায় বসতবাড়ির গাছ কর্তনের অভিযোগে মামলা দায়ের করায় ক্ষুদ্ধ হয়ে বাদীনির উপর নির্দয়ভাবে বিবাদীদের হাতুড়িপেটার আঘাতে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে শয্যাশায়ী বাদীনি মোছাদ্দেকা বেগম-(৪৮) ও ছেলে মোঃ আবু হানিফ-(২০)। আহতদেরকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে।
বৃহস্প্রতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারী) সকাল সাড়ে ৮ টায় উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের সবজিবন পাড়া এলাকায় ঘটে এ ঘটনা। আহতেরা হলেন, একই এলাকার প্রবাসী মোঃ শফির স্ত্রী মোছাদ্দেকা বেগম-(৪৭) ও ছেলে আবু হানিফ-(২০)।
হামলাকারীরা হলেন, একই এলাকার মৃত এমদাদ মিয়ার ছেলে নবী আলম,তার স্ত্রী পারভিন আকতার ও ছেলে মোঃ মুবিন।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী মোঃ আজিজসহ কয়েকজন বলেন, প্রবাসী মোঃ শফি ও হামলাকারী নবী আলম সহোদর ভাই। তাদের পিতা মারা যাবার পর প্রবাসী মোঃ শফি ও নবী আলম ২০০৭ সালে ১৯১১ নং কবলামুলে যৌথভাবে ২০ শতক জমি ক্রয় করে। এর বছর দুয়েক পর নবী আলম তার অংশটি পিতার ওয়ারেশি অংশের সাথে এওয়াজ করে দেয় বড় ভাইকে। সে থেকে বিগত দেড় যুগ যাবত শফি বসতবাড়ি তৈরি করে শাম্তিপূর্ণভাবে ভোগ-দখল করে আসছে। শফি সৌদি আরবে প্রবাসি। বিগত বছর দুয়েক ধরে শফির অনুপস্থিতির সুযোগে বসতবাড়ির জবর-দখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছে নবী আলম ও তার ছেলেরা। এনিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতে শালিষ বৈঠক হয়েছে। গ্রাম আদালতের নিষেধ অমান্য করে গত কিছুদিন আগে শফির বসতবাড়ির আমগাছসহ বেশ কয়েকটি গাছ কর্তন করে জবর দখলের চেষ্টা চালায়। এতে নিরূপায় হয়ে শফির স্ত্রী মোছাদ্দেকা চকরিয়া সিনিয়র জুড়িশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে নালিশি অভিযোগ দায়ের করেন। যার নং (২৮৩/২৩)। বিজ্ঞ আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্তভার দেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন (পি বি আই) কক্সবাজারকে। আদালতের আদেশ পেয়ে তদন্তের দায়ীত্ব পাওয়া কর্মকর্তা সরেজমিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে স্থানীয়দের কাছে ঘটনার বিস্তারিত জানার পর বিবাদীকে বিরোধীয় জায়গায় কোন ধরণে কাজ না করার পরামর্শ দেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা চলে যাওয়ার পর আজ সকালে নবী আলম, তার স্ত্রী ও ছেলে দা,কিরিচ ও হাতুড়ি নিয়ে বাদী মোছাদ্দেকার বসতবাড়িতে ঢুকে এলোপাতাড়ি হাতুড়িপেটা করতে থাকে। এসময় শফির ছেলে আবু হানিফ তার মাকে উদ্ধার করতে গেলে তাকেও হাতুড়িপেটা করে। এসময় আমিসহ স্থানীয় কয়েকজন এগিয়ে এসে তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করি। নবী আলম সমাজপতি, থানা পুলিশ ও আইন কিছুই মানে না। আপনাদের মাধ্যমে থানা প্রশাসনের কাছে অনুরোধ নবী আলমের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনী ব্যবস্থা নেয়া না হলে যেকোন সময় আরো বড় ধরণের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটাতে পারে।
আহত মোছাদ্দেকা বেগম বলেন, আমার স্বামী ও দেবর নবী আলম ২০০৭ সালে যৌথভাবে ১৯১১ নং কবলামুলে জমি ক্রয় করে। ক্রয়কৃত জমির তার অংশটি আমার শ্বশুর হতে ওয়ারিশমুলে প্রাপ্ত অংশটি স্বামী মোঃ শফি নবী আলমের সাথে এওয়াজ বদল করে। সে থেকে আপোষে গৃহ নির্মাণ করে চতুর্দিকে ঘেড়াবেড়া দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে ভোগ-দখল করে আসছি। বিগত বছর দূয়েক আগে সে জমি পাবে দাবী করে বসে। তখন আমার স্বামী স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে বৈঠক করে জমি কবলা দেয়ার চুক্তিতে তাকে জমি বাবদ ২ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা নগদ প্রদান করে। টাকা তার হাতে যাওয়ার পর আর কবলা না দিয়ে জবর-দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে। গত কয়েকদিন আগে সে ও তার স্ত্রী-ছেলেকে নিয়ে এসে আমার বসতবাড়ির আমগাছসহ বেশ কয়েকটি গাছ কর্তন করে ফেলে। তার এমন অন্যায় আচরণের ফলে আমি চকরিয়া আদালতে মামলা দায়ের করি। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য পি বি আইকে দায়ীত্ব দেয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে সরেজমিন এসে স্থানীয়দের কাছ থেকে ঘটনার বিষয়ে জানার পর তাকে অযথা জামেলা না করতে বারণ করেন।
তদন্তকারী কর্মকর্তা যাওয়ার পর আজ সকালে নবী আলম,স্ত্রী পারভিন আকতার ও ছেলে মুবিন দা,কিরিচ ও হাতুড়ি নিয়ে আমার বসতবাড়িতে এসে কোন কিছু বুজে উঠার আগেই আমাকে হাতুড়িপেটা করতে থাকে। আমাকে উদ্ধার করতে আমার ছেলে আবু হানিফ এগিয়ে আসলে তাকেও হামলা করে আমার গলায় রক্ষিত স্বর্ণের চেইন ও রকেট,কানের ফুল ও ছেলে হাতে থাকা এন্ড্রয়েট সেট মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। এসময় স্থানীয়রা এগিয়ে এসে আমাদের উদ্ধার করে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। আমি নবী আলমের অত্যাচার থেকে বাঁচতে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।
হামলার বিষয়ে জানতে নবী আলমের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার খোঁজ না পাওয়ায় বক্তব্য দেয়া সম্ভব হয়নি।
পেকুয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) মোহাম্মদ ওমর হায়দার সংঘর্ষের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, তদন্তপূর্বক দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।